গ্রন্থাগার বা প্রকৃত অর্থে "পাঠাগার" হলো বই, পুস্তিকা ও অন্যান্য তথ্য সামগ্রির একটি সংগ্রহশালা, যেখানে পাঠকের প্রবেশাধিকার থাকে এবং পাঠক সেখানে পাঠ, গবেষণা কিংবা তথ্যানুসন্ধান করতে পারেন। বাংলা 'গ্রন্থাগার' শব্দটির সন্ধি বিচ্ছেদ করলে গ্রন্থ+আগার এবং 'পাঠাগার' শব্দটির সন্ধি বিচ্ছেদ করলে পাঠ+আগার পাওয়া যায়। অর্থাৎ গ্রন্থসজ্জিত পাঠ করার আগার বা স্থান হলো গ্রন্থাগার। গ্রন্থাগারের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দ্বায়িত্বশীল ব্যক্তি হলেন গ্রন্থাগারিক। গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরী কে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-জাতীয় গ্রন্থাগার, গণগ্রন্থাগার, একাডেমিক গ্রন্থাগার এবং বিশেষ গ্রন্থাগার।
গ্রন্থাগার সমাজ উন্নয়নের বাহন। একটি জাতির মেধা, মনন, ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারণ ও লালন-পালনকারী হিসেবে গ্রন্থাগার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সর্বসাধারণের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রন্থাগারের সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রয়েছে। তাই গ্রন্থাগারকে বলা হয় ‘জনগণের বিশ্ববিদ্যালয়’। দেহের পুষ্টি জোগায় খাদ্য, আর বই জোগায় মনের খাদ্য। তাই ‘বই’ সভ্য মানুষের নিত্যসঙ্গী। জ্ঞানের বহিঃ প্রকাশ হচ্ছে গ্রন্থ। লেখক লেখেন, প্রকাশক ছাপেন, বিক্রেতা বই বিক্রি করেন আর গ্রন্থাগারিক তা সংগ্রহ করে যথাযথ বিন্যাস করেন এবং পাঠক সমাজ ঐসব উপাদান থেকে মনের খোরাক এবং জ্ঞানলাভে সমর্থ হন। গ্রন্থাগারে থাকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিচিত্র বিষয়ের গ্রন্থ। আগ্রহী পাঠকের জন্যে গ্রন্থাগার জ্ঞানার্জনের যে সুযোগ করে দেয়, সে সুযোগ অন্য কোথাও নেই। গ্রন্থাগারের মাধ্যমে মানুষ জ্ঞানসমুদ্রে অবগাহন করে জ্ঞানের মণিমুক্তা সংগ্রহের সুযোগ পায়। গ্রন্থাগারের আয়োজন সর্বসাধারণের জন্যে অবারিত। চিন্তাশীল মানুষের কাছে গ্রন্থাগারের উপযোগিতা অনেক বেশি। গ্রন্থাগার জ্ঞান আহরণের সহজ মাধ্যম। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে গ্রন্থাগারের উপযোগিতা উন্নত দেশগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। কারণ মৌলিক চাহিদা মেটাতেই আমরা হিমশিম খাই। তাই আমাদের পক্ষে বই কিনে পড়া অনেক সময় সম্ভব হয় না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষক প্রতিদিনের টিফিন-পিরিয়ড বা অন্য অবসর সময়টা আড্ডা ও গল্প-গুজবের মধ্য দিয়ে কাটিয়ে দেয়। কিন্তু একটা লাইব্রেরি থাকলে ছাত্র-শিক্ষক তাদের প্রতিদিনের অবসর সময়টা পড়ালেখায় কাটাতে পারেন।
প্রমথ চৌধুরী যথার্থই বলেছেন, ‘‘আমরা যত বেশি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করব, দেশের তত বেশি উপকার হবে। আমার মনে হয়, এদেশে লাইব্রেরির সার্থকতা হাসপাতালের চাইতে কিছু কম নয় এবং স্কুল-কলেজের চাইতে একটু বেশি।’ লাইব্রেরি হচ্ছে এক রকম মনের হাসপাতাল। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য আমাদের মৌলিক চাহিদাসমূহের দুটি। কাজেই আমাদের দেশে হাসপাতালের সঙ্গে সঙ্গে গ্রন্থাগারও স্থাপন করতে হবে।”
কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, শেরপুর একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরী রয়েছে। এখানে কৃষি ডিপ্লোমার পাঠ্যপুস্তক, কৃষি বিষয়ক অন্যান্য বই-পুস্তক, সাহিত্য, ইতিহাস, ভূগোল, রাজনতি, অর্থনীতি সহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার বই সহ সাপ্তাহিক ও পাক্ষিক ম্যাগাজিন রয়েছে। ব্যবহারকারীগণের সুবিধার্থে সমগ্র লাইব্রেরীকে একাডেমিক কর্ণার, মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার, বঙ্গবন্ধু কর্ণার সহ বিভিন্ন অংশে ভাগ করা হয়েছে। লাইব্রেরী কার্ড প্রদর্শন করে ছাত্র-ছাত্রী, কর্মকর্তা-কর্মচারী গণ লাইব্রেরী থেকে নির্দিষ্ট মেয়াদে বই সংগ্রহ করতে পারেন। অত্র প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী, কর্মকর্তা-কর্মচারী গণ লাইব্রেরীতে নিয়মিত পড়াশোনা ও জ্ঞান চর্চা করেন যা জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS