মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে বর্তমান শ্রেণিকক্ষের আমুল পরিবর্তন না করে একটি ইন্টারনেট সংযোগসহ ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কম্পিউটার, সাউন্ড সিস্টেম এবং একটি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর এর পাশাপাশি প্রচলিত উপকরণ যেমন: চক, ডাস্টার প্রভৃতির বিদ্যমান। শ্রেণি কার্যক্রমকে আরও আকর্ষণীয়, আনন্দময় ও কার্যকর করার জন্য শিক্ষক প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পাঠ্যাংশ টুকু মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে উপস্থাপন করবেন এবং প্রয়োজনবোধে ইন্টারনেট সার্চ করে শিক্ষার্থীর পাঠ সংশ্লিষ্ঠ প্রশ্নের কৌতূহল মেটাবেন।
মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশনের প্রতিটি স্লাইড বা কনটেন্ট হবে চিন্তা উদ্রেককারী (Thought Provoking) এগুলোকে আমরা মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট বলতে পারি। মাল্টিমিডিয়া কনটেন্টে থাকতে পারে বিষয় সংশ্লিষ্ট কিছু লেখা, ছবি, গ্রাফ, চার্ট, মানচিত্র, তথ্যচিত্র, ক্ষুদ্রচিত্র, এ্যানিমেশন, শব্দ এবং ভিডিও অথবা এগুলোর সমন্বয়। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে কোন বিমূর্ত, কঠিন বা দুর্লভ বিষয়বস্তুকে সহজ, বোধগম্য, আনন্দদায়ক ও আকর্ষণীয় করে শিক্ষার্থীর চাহিদা অনুযায়ী পাঠ উপস্থাপন করা। যার মাধ্যমে পাঠটি শিক্ষার্থীর মানসপটে মূর্ত বা বাস্তব হয়ে উঠে।শ্রেণিতে মাল্টিমিডিয়া কনটেন্টের ব্যবহার করলে যেমন গণিত কিংবা বিজ্ঞানের জটিল সব বিষয় শিক্ষার্থীদের কাছে আরো সহজ ও প্রাঞ্জল হয়ে উঠবে তেমনি বিমূর্ত সব বিষয়গুলো সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা পরিষ্কার ধারণা অর্জনে সক্ষম হবে।
মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও কল্পনাশক্তির প্রসার ঘটাতে সক্ষম। মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম একীভূত শিক্ষা বাস্তবায়নে সহায়ক। কারণ এই মাধ্যমে একইসাথে বিভিন্ন ধরণের চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থী তাদের নিজেদের মত করে শিখন চাহিদা পূরণ করে। অন্যদিকে গ্রাম ও শহরের শিক্ষার্থীদের মধ্যকার ডিজিটাল বৈষম্য এবং শিক্ষা বৈষম্য কমিয়ে আনতে মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় নিঃসন্দেহে এক নবতর সংযোজন। ধনী-গরীব, গোষ্ঠী-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুমের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে পাঠে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা, মনোযোগ বৃদ্ধি করা এবং শ্রেণি কার্যক্রমে তাদের আরো সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে আনন্দঘন পরিবেশে শিখন নিশ্চিত করা। মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে পাঠ উপস্থাপন একদিকে শিক্ষার্থীদের শিখনকে অধিকতর কার্যকরী এবং আনন্দদায়ক করে অন্যদিকে শিক্ষক নিজেও পাঠদান করতে উৎসাহ বোধ করেন। তবে শিক্ষককে একথা মনে রাখতে হবে যে, মাল্টিমিডিয়া পাঠদানের একটি কৌশল মাত্র। তিনি যেন এর দ্বারা চালিত না হয়ে বা এর উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজে এটাকে প্রয়োজনমত পরিমিতভাবে ব্যবহার করেন সেদিকে সতর্ক হতে হবে।
ক্লাশরুমের প্রতিটি শিক্ষার্থীই আলাদা, প্রত্যেকের শিখনচাহিদাও আলাদা। একেকজন একেকভাবে শেখে। কেউ দেখে শেখে, কেউ পড়ে শেখে, কেউ শুনে শেখে, কেউ দেখে ও শুনে শেখে, কেউবা আবার হাতে কলমে কাজ করে শিখতে পছন্দ করে। একই শ্রেণিকক্ষে বিভিন্নজনের শিখন চাহিদা পূরণ করা একজন শিক্ষকের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং। এক্ষেত্রে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার শিক্ষককে সহযোগিতা করতে পারে। মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে বিষয় সংশ্লিষ্ট একটি ক্ষুদ্র চিত্র বা ছোট একটি ভিডিও খুব সহজে শিক্ষার্থীর মনোযোগ আকর্ষণ করে। প্রয়োজনে শিক্ষক সহজেই তা পূনরায় দেখাতে পারেন। মাঝে মাঝে ভিডিও থামিয়ে বা ছবি দেখিয়ে ছোট ছোট প্রশ্ন করে শিক্ষার্থীদের গাঠনিক মূল্যায়নের মাধ্যমে বোধগম্যতা পরিমাপ করতে পারেন। সেই সাথে কিছু কিছু বিষয় একক কাজ বা দলীয় কাজ বা হাতে কলমে কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের করতে দিলে শিখন আরও অনেক বেশি কার্যকর হবে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের না বুঝে মুখস্ত করার প্রবণতা দূর হবে। ক্লাশের পাঠ ক্লাশেই সম্পন্ন হবে ফলে শিক্ষার্থীরা আত্মবিশ্বাসী, নিজের মেধা ও বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে নতুন নতুন চিন্তাচেতনায় নিযুক্ত করতে সক্ষম হবে।
মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম শিক্ষার্থীদের পাঠকে সহজ করে, তাদেরকে পাঠে সম্পৃক্ত করে, সক্রিয় করার মাধ্যমে নাবুঝে পড়ার অভ্যাস, পরীক্ষাভীতি দূর করে আনন্দদায়ক বা সৃজনশীল শিখন নিশ্চিত করে। মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম শিক্ষার্থীদের কৌতুহলী মনকে নতুন নতুন বিষয়ে আগ্রহী করে, তাদের চিন্তাশক্তিকে উদ্দীপ্ত করে এবং ভাবনার জগত্টাকে প্রসারিত করে। এ ধরনের পাঠদান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থী নিজেকে একজন সম্ভাবনাময় পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয় যা মেধাবী জাতি গঠনে অত্যন্ত জরুরী।
মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের এই বহুবিধ সুবিধাকে কাজে লাগানোর জন্য কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, শেরপুর এ শ্রেণীকক্ষে মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস